Financial Literacy (আর্থিক সাক্ষরতা)


Financial Literacy

আর্থিক সাক্ষরতা দিবস- ২০২৩

বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন ও ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল (২০২১-২০২৬) বাস্তবায়নে সবার জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণে আপামর জনগোষ্ঠীর মাঝে আর্থিক সাক্ষরতা বিস্তার অপরিহার্য। জনগণের মাঝে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পৌঁছে দেয়া হলে তারা আধুনিক ব্যাংকিং এবং আর্থিক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক পণ্য এবং সেবা গ্রহণে আগ্রহী হবে যা বাংলাদেশের সার্বিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক সাক্ষরতা নির্দেশিকা প্রণয়ন করে যাতে ৬ই মার্চ (প্রতিবছর মার্চ মাসের ১ম সোমবার) আর্থিক সাক্ষরতা দিবস পালন করার নির্দেশনাজারী করা হয় এবং ৬ই মার্চ, ২০২৩ (সোমবার), ১৯শে ফাল্গুন, ১৪২৯ সারা দেশে আর্থিক সাক্ষরতা দিবস-২৩ পালন করা হচ্ছে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং এ আগ্রহী হবে, সঞ্চয় করবে এবং জীবনমান উন্নত হবে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও বাংলাদেশ

গত ১ দশকে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিপ্লব হয়েছে এবং আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছি যে, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। আর্থিক সেবাবঞ্চিত সাধারণ মানুষের কাছে সাধ্যের মধ্যে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোই হচ্ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। ২০১০ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক এ দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকান্ড প্রবর্তন ও নেতৃত্ব প্রদান করে আসছে। এগুলোর মধ্যে আছে, ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকায় খোলা ব্যাংক হিসাব যেমন স্কুল ব্যাংকিং হিসাব, পথশিশু ও কর্মজীবী মানুষের ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং মাধ্যমে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি মানে শুধু টাকা গ্রহণ বা পাঠানো নয় সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষকে আধুনিক ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে এসে সঞ্চয়ে আগ্রহী করা, ডিজিটাল লেনদেনের উৎসাহী করা, ক্ষুদ্র-ঋণসহ অন্যান্য ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আশাই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিভিন্ন তথ্যাবলীঃ

ব্যাংকের সংখ্যা- ৬১
প্রাপ্ত বয়স্ক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হারঃ প্রায় ৫০%
শাখা এবং উপ-শাখার সংখ্যা- প্রায় ১৫,০০০
এটিএম এর সংখ্যা- ১৩,৪৩৪
পয়েন্ট অফ সেলস- ১০৩,০৫৫
এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টের সংখ্যা- ১৫,২২৬
মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট এর সংখ্যা- ১৬ লক্ষ
এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা- ১.৭৫ কোটি
মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা- ১৯.১১ কোটি
ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা- ৬৩ লক্ষ
স্কুল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা- ৩২.১৭ লক্ষ
১০/৫০/১০০ টাকার গ্রাহক সংখ্যা- ২.৫৯ কোটি
ডেবিট কার্ড গ্রাহক সংখ্যা- ২.৯৮ কোটি
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক সংখ্যা- ২১ লক্ষ
এজেন্ট ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমাণ- ৬২,৭৬২ কোটি
মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমাণ- ৯৬,১৩৩ কোটি
ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমাণ– ২৭,৫৫৯ কোটি
ডেবিট কার্ড লেনদেনের পরিমাণ – ৩৬,৭১১ কোটি
ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের পরিমাণ – ২,৪৯০ কোটি

 

রেমিট্যান্স উৎসব ২০২৩

বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমে দ্রুত, সহজে ও নিরাপদে প্রবাসী আয় আদান-প্রদান আগ্রহী করতে মধুমতি ব্যাংক শিবচর, মাদারীপুরে দিনব্যাপী মধুমতি ব্যাংক রেমিট্যান্স উৎসব-২০২৩ উদযাপন করে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা  ও বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা নিতে আগ্রহী করাই ছিল রেমিট্যান্স উৎসবের মুল লক্ষ্য। উক্ত অনুষ্ঠানে গ্রাহক, রেমিট্যান্স যোদ্ধা এবং তাঁদের সুবিধাভোগীদের জন্য রেমিট্যান্স সম্মাননা পুরষ্কার, বৈদেশিক রেমিট্যান্স গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে একাউন্ট খোলা, জায়নাক্স হেলথ এর সৌজন্যে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য এবং টেলিমেডিসিন সেবা, দেশীয় নানাধরনের পিঠা ও খাবারের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব স্বপন কুমার দাশ, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বরিশাল কার্যালয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ সফিউল আজম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড  এবং উক্ত অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ছিলেন জনাব কামরুল হাসান খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ বিজনেস অফিসার, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড সহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের

সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে LOGIC (Local Government Initiatives on Climate Change) ও GCA (Gender-responsive Coastal Adaptation) এর আওতাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনার জন্য মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, স্থানীয় NGO (PCC & MEC) ইউএনডিপির এর সাথে কাজ করছে। প্রকল্পের অধীনে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম এবং সুনামগঞ্জ মোট ৭ জেলার ৬০ এরও অধিক ইউনিয়নে প্রথম পর্যায়ে Logic এর ১৮০০০ হাজার ও GCA এর ৪৫০০০ হাজার একাউন্ট খোলার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। একাউন্ট গুলোতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার অনুদান জমা হয়েছে এবং এই প্রকল্পের অধীনে আরও প্রায় ৫৭ কোটি টাকা জমা  হবে । এর ধারাবহিকতায় প্রকল্পের অধীনে হিসাবধারী গ্রাহকদের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহের এর কাজ চলছে।

উঠান বৈঠক ও গ্রাহকের সাথে চা চক্র 

এ ধরণের কর্মসূচি মূলত গ্রাহদের সচেতনতা বাড়ানোর ও গ্রাহকদের সঞ্চয় করার জন্য উঃসাহিত করা হয়। সমাজে বিভিন্ন প্রতারক চক্র থেকে গ্রাহকদের নিজে ও অন্যানদের সচেতন করে তুলবে এবং রেমিট্যান্সের জন্য ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারের সুবিধা এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আর্থিক সাক্ষরতা প্রশিক্ষণ কর্মশালা 

প্রান্তিক জনগণের মাঝে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং আর্থিক সাক্ষরতা প্রসারের উদ্দেশ্যে মধুমতি ব্যাংক দিনব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা কর্মশালার আয়োজন করে। এই কর্মসূচিতে প্রায় ৫২০ জন এজেন্ট এবং তাদের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে। এজেন্টরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং আর্থিক সাক্ষরতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সার্বিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এজেন্টদেরকে সুবিধাবাঞ্ছিত জনগণকে ব্যাংকিং, সঞ্চয়, বিভিন্ন ব্যাংকিং পরিসেবা, ডিজিটাল লেনদেন, পল্লী এবং কৃষিঋণ সম্পর্কে সম্যক ধারনা দেয়া হয় যাতে এজেন্ট এবং তাদের প্রতিনিধিরা প্রান্তিক জনগণের মাঝে আর্থিক সাক্ষরতা এবং আর্থিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাতে পারে। এছাড়া কর্মশালায় বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স গ্রহণ এবং হুডিকে নিরুৎসাহিত করতে গ্রাহক সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচীকে আরও বেগবান করার জন্য গ্রাহকের সাথে চা চক্র, উঠান বৈঠক এবং বর্গাচাষীদের সাথে সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিষয়ক গ্রুপ এবং বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা হয়।

ক্ষুদ্র ও মাঝারী লোনের জন্য নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বিকাশের জন্য আমাদের আর্থিক সাক্ষরতা কার্যক্রম

আমাদের দেশে অধিকাংশ উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় শুধু মাত্র সঠিক ব্যাংকিং নিয়ম না জানার কারণে। তাই উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসার জন্য মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, ইউএনডিপি ও  স্থানীয় NGO (PCC & MEC) উপকারভোগীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরণের ট্রেনিং প্রোগ্র্যাম অয়োজন করেছে। উক্ত ট্রেনিং প্রোগামে নারী ও পুরুষ মিলে সর্বমোট ২৪০ জন কে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ঋণ বিষয় ট্রেনিং দেওয়া হয়।

১. উদ্যোক্তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আর্থিক স্বাক্ষরতা সম্পর্কে বিভিন্ন তর্থ প্রদান করা। তাদের ব্যাংকিং সেবা ও এর আওতাভুক্ত নানা ধরণের সুযোগ সুবিধাগুলো সম্পর্কে অবহিত করা।

২. এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং এর সুযোগ সুবিধা গুলোর সম্পর্কে অবহিত করা।

৩. ব্যাংক থেকে যে সমস্ত ঋণ প্রদান করা হয়, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা অনুযায় তাকে ঋণ গ্রহণের প্রযোজনীয় তথ্য প্রদান করা এবং ঋণ গ্রহণ করা জন্য যেসব ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে এই বিষয় গুলো গ্রাহককে অবহিত করা।

আমাদের ট্রেনিং প্রোগ্রামের খন্ড চিত্র